আবু বক্কর সিদ্দিক:-
- ছবির ক্যাপশন: স্পা সিন্ডিকেটে ভাঙতে ডিসি-ওসির জিরো টলারেন্স ঘোষণা।
মাদক, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, যৌন হয়রানি চক্রের বিরুদ্ধে তৎপর অভিযান
স্থানীয় তথ্য ও গোয়েন্দা রিপোর্ট ব্যবহার করে ‘স্মার্ট অপারেশন’
সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত
পথশিশু ও দূর্বল জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো
দ্রুত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়
জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন
রাজধানীর গুলশান অঞ্চলে অবৈধ স্পা সেন্টার ও সংশ্লিষ্ট অপরাধী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিশেষ অভিযানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ ও গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছেন। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, এই শহরে কারো প্রভাব প্রতিপত্তির মূল্য নেই যে কোনো চক্র, যে কোনো গোষ্ঠী, যে কোনো পরিচয়ে অপরাধ করলে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। পরিচালিত অভিযানে নারী শোষণ, দালালি, ডিজিটাল প্রচার, আর্থিক লেনদেন এবং মাদক সরবরাহে জড়িত একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ককে ধরতে সক্ষম হয় গুলশান বিভাগের পুলিশ। অভিযান শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ডিসি তারেক মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, গুলশান এলাকা শুধু অভিজাত নয়, এটি রাজধানীর সবচেয়ে নিরাপদ জোন হিসেবে পরিচিত। যারা এ জায়গাকে অপরাধের আখড়া বানানোর চেষ্টা করছে, তারা সরাসরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি এবং যেকোনো মূল্যে এসব নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে প্রস্তুত। তিনি আরও জানান, স্পা সেন্টারটির ভেতর যেসব প্রমাণ উদ্ধার করা হয়েছে, তা রাজধানীর আরও কয়েকটি এলাকায় বিস্তৃত বড় নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত দেয়। এ কারণে প্রাথমিক আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে ইতোমধ্যে গোয়েন্দা ইউনিট সংযুক্ত হয়েছে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে বেশ ক’জন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নাম এসেছে, বলেন ডিসি তারেক মাহমুদ। কিন্তু এগুলো আমাদের কাজে কোনো প্রভাব ফেলবে না। আমি পরিষ্কার করে বলছি আইন সবার জন্য সমান। গুলশানে অবৈধ ব্যবসা চালালে আপনাকে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। অভিযানের সময় বাইরে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী একটি গোষ্ঠীর অভিনব আচরণ নিয়েও দৃঢ় ভাষায় কথা বলেন তিনি।
তারেক মাহমুদ বলেন, অভিযান ব্যাহত করতে বাইরে থেকে কয়েকজন পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেছে। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে বাধা দিতে চায়, তারা সমানভাবে অপরাধী। এদের শনাক্ত করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হবে। গুলশান বিভাগের পুলিশের লক্ষ্য শুধু একবারের অভিযান নয় বরং দীর্ঘমেয়াদে অপরাধী নেটওয়ার্ক নির্মূল করা। আমরা কোনো প্রতিশোধমূলক বা প্রতিক্রিয়াশীল পুলিশিং করছি না। আমরা করছি প্রমাণভিত্তিক, তথ্যভিত্তিক এবং জবাবদিহিতামূলক পুলিশিং, এ কথা উল্লেখ করে তিনি সকল ধরনের অবৈধ নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে বলে নিশ্চিত করেন।
ডিসির বক্তব্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় যুবসমাজের সুরক্ষা। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসা শুধু অপরাধ নয়—এটি একটি প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়। কেউ যদি তরুণদের ব্যবহারে অপরাধের পথ তৈরি করে, আমরা তাকে কখনো ছাড় দেব না। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা ডিসি ও ওসির এ কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমরা জানি রাজধানীর হৃদপিণ্ড বলা হয় এই অঞ্চলটিকে অগণিত বৈদেশিক মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বহুজাতিক কোম্পানি, পাঁচ তারকা হোটেল, বড় বড় আবাসিক ভবন, কূটনৈতিক নিরাপত্তা জটিলতা, ব্যস্ততম সড়ক নেটওয়ার্ক সব মিলিয়ে গুলশানকে নিয়ে পুলিশের দায়িত্ব যেমন বিশাল, তেমনি চ্যালেঞ্জও অনিবার্য। আর এই চ্যালেঞ্জের কেন্দ্রে যিনি প্রতিদিন কাজ করছেন, ডিএমপির গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান (পিপিএম)। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর গুলশানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে। যেমন: অবৈধ স্পা, অবৈধ মদেও বার ও শিশা, মাদক নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি দমন, বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা, সাইবার ও আর্থিক অপরাধ মোকাবিলা, সংঘবদ্ধ অপরাধ ধরপাকড়, নারী ও শিশু সুরক্ষা সব ক্ষেত্রেই তিনি এনেছেন নতুন ধারা। তার ঘোষিত “জিরো টলারেন্স” আইনের চোখে অপরাধী যেই হোক, ছাড় নয় এ নীতিই তাকে দ্রুত জনপ্রিয়তার শীর্ষে তুলে এনেছে। তবে কঠোর আইন প্রয়োগ, অন্যদিকে মানবিক আচরণ এই দুইয়ের অনন্য সমন্বয়ই তাকে পরিণত করেছে একজন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান। যার কাজ দেখিয়ে দিয়েছে পুলিশ মানেই ভয়ের প্রতীক নয়, বরং আস্থার আশ্রয়।
তারা জিরো টলারেন্স নীতি এবং মানবিক পুলিশিংয়ের সমন্বয়ে এই এলাকায় নতুন আস্থার পরিবেশ তৈরি করেছেন। গুলশানকে জিরো ক্রাইম মডেল হিসেবে গড়ে তোলাই তার প্রধান লক্ষ্য। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দিনরাত মাঠে ছিলেন। গভীর রাতে ২-৩টা পর্যন্ত গুলশানের বিভিন্ন গলি, লেকপাড়, কূটনৈতিক অঞ্চল, বহুতল ভবনের চারপাশ, সন্দেহভাজন স্থান ও অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে টহল ও পরিদর্শন চালান। থানার স্টাফদের আচরণ, অপরাধ ডাটাবেইস, পেন্ডিং মামলা, এবং বিট পুলিশিংয়ের সার্বিক অবস্থায় আনেন নতুন কাঠামো। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্রুত ধারণা তৈরি হয়। তার ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তব প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে মাদকবিরোধী অভিযানে। আগে যে কয়েকটি পয়েন্টে মাদকের লেনদেন হতো বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করতেন, সেগুলো শনাক্ত করে হঠাৎ রেইড নয়, বরং গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক টার্গেট অপারেশন চালানো হয়। মাত্র তিন মাসে মাদক মামলার সংখ্যা বেড়েছে অনেক এবং অপরাধীদের সংখ্যা কমেছে যা পুলিশের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে এবং মাদকচক্রের দৌরাত্ম্য কমিয়েছে।
অপরদিকে নির্মাণাধীন ভবন, রেস্টুরেন্ট, কনস্ট্রাকশন সাইটে দীর্ঘদিন ধরে চলা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে শুরু হয় বিশেষ অভিযান। প্রভাবশালী যেই হোক এমন নীতির কারণে ব্যবসায়ীদের মাঝে ফিরেছে আস্থা। গুলশান এলাকার বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় গঠন করা হয়েছে নতুন সমন্বয় সেল, কূটনৈতিক সড়কগুলোতে টহল বাড়ানো হয়েছে এবং বিদেশি নাগরিকদের হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগে তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার মতো ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে বিশেষ টিম। ইভ টিজিং, ব্ল্যাকমেইলিং বা গার্হস্থ্য সহিংসতার অভিযোগ পাওয়ামাত্রই তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। পাশাপাশি কিশোর গ্যাং দমনে নেওয়া হয়েছে কঠোর উদ্যোগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত গ্যাংগুলো শনাক্ত করে রাতের বেলা পার্ক ও লেকপাড় এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারি চালানো হয়। ফলে অনেক পরিবারই বলছে রাতে সন্তান বাইরে গেলে আগের মতো ভয় লাগে না।
আইন প্রয়োগে কঠোরতার পাশাপাশি মানবিক পুলিশিংয়ে ওসির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। রাতে রাস্তায় দুর্বল অবস্থায় পাওয়া বৃদ্ধা মহিলার চিকিৎসা ও আশ্রয়, পথশিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং বিদেশি দূতাবাসদের নিরপত্তা নিশ্চিত করা, নারীদের নিরাপত্তায় রাতের বিশেষ টহল এসব উদ্যোগ সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে অনেকটাই। স্থানীয়দের মতে, এখন পুলিশ মানেই ভয় নয়, বরং সাহায্যের আশ্রয়। গুলশানে আগে বিট পুলিশিং কাঠামো থাকলেও তা কার্যত সক্রিয় ছিল না। নতুন ওসি দায়িত্ব নিয়ে ১২টি বিট এলাকায় নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। বিট অফিসারদের ফোন নম্বর নাগরিকদের হাতে পৌঁছে দেওয়া, ভবনের গার্ডরেজিস্টার নিয়মিত যাচাই, ঝুঁকি ম্যাপিং এবং ছোটখাটো বিরোধ বিট পর্যায়েই সমাধান এসব ব্যবস্থা পুলিশের ওপর চাপ কমিয়েছে এবং নাগরিকদের আস্থা বাড়িয়েছে। তার নেতৃত্বে সমন্বিত উদ্যোগের ফলে তিনি ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে ‘অপরাধ দমনে শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা’ হিসেবে সম্মাননা অর্জন করেন। টার্গেটভিত্তিক মাদকবিরোধী অভিযান, কূটনৈতিক নিরাপত্তা জোরদার, সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন, সাইবার প্রতারণা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ, মানবিক পুলিশিংয়ের সফল উদাহরণ এবং থানার অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা এসবই তাকে এই স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।
এদিকে গত গুলশানের ওসি হাফিজুরের নির্দেশ মোতাবেক ১৩২ নং রোডে একটি স্পা সেন্টারে অভিযান চালিয়ে স্বৈরাচারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ নারী সিন্ডিকেট গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ। গত ২১/১১/২৫ ইং তারিখে শুক্রবার আনুমানিক রাত ৯ টার দিকে একটি স্পা সেন্টারে অভিযানে পুলিশ নারী শোষণ, দালালি ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একটি সক্রিয় চক্রের সদস্যদের আটক করে। এ ঘটনায় থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পুরো অপারেশনটি নেতৃত্ব দেন গুলশান থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান। থানা সূত্র জানায়, গত কয়েক মাস ধরে চলমান গোপন নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে “অ্যালিস স্পা” নামক প্রতিষ্ঠানটি আসলে একটি সংগঠিত অপরাধী নেটওয়ার্কের আড়াল। গোপনে এখানে মানবপাচার, মাদক লেনদেন এবং প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় অবৈধ আর্থিক লেনদেন চলছিল এবং প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানীর আরও কয়েকটি এলাকায় বিস্তৃত একটি বড় নেটওয়ার্ক এখান থেকে পরিচালিত হতো।
অভিযানের সময় আটক নারীসহ কয়েকজন কর্মচারী জানান, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের এই চক্রে যুক্ত করা হয়েছিল। অনেককে প্রতিদিন নির্দিষ্ট টার্গেট পূরণের জন্য চাপ দেওয়া হতো। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, নারীদের মাধ্যমে গ্রাহকদের টার্গেট করে মাদক বিক্রি ছিল এই নেটওয়ার্কের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস। তবে অভিযান শুরুর পরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের দাবি, অভিযানের খবর পেয়ে বাহিরের একটি রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত যুবগোষ্ঠী হঠাৎ করে ঘটনাস্থলের আশপাশে জড়ো হয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তা বলেন, গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমানের দিগ নির্দেশনায় এই অভিযানটি চালানো হয় এবং কয়েকজন স্বৈরাচারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকেও গ্রেফতার করা হয় এবং গুলশানে পরিচালিত সাম্প্রতিক অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কয়েকজনের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ত পরিচয় প্রকাশ করেছিলেন ওসি হাফিজুর রহমান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নথি ও পুলিশের ব্রিফিংয়েও দেখা যায়, অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন নিজেদের ছাত্রলীগকর্মী দাবি করেছেন।
এ ধরনের অবৈধ ব্যবসা শুধু একটি এলাকার নিরাপত্তা নয়, পুরো শহরের সামাজিক স্থিতিকে বিপন্ন করে। আমরা নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়ার পর আন্দোলিত গোষ্ঠীর চাপ উপেক্ষা করে অভিযান চালিয়েছি। কেউ বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, ঘটনাটির পেছনে কারা কারা প্রভাব বিস্তার করেছে এবং সংগঠিত নেটওয়ার্কটি কীভাবে পরিচালিত হতো এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে আলাদা অনুসন্ধান টিম কাজ করছে। তবে আসামীদের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, এবং অর্থপাচারের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেটওয়ার্কটির অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে আরও অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাটিকে স্বস্তির হিসেবে দেখছেন। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। এই অভিযান ভবিষ্যতে সংগঠিত অপরাধ দমনকে আরও সাহসী করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। অণ্যদিকে গতকাল ২২/১১/২৫ ইং তারিখে সন্ধ্যার দিকে গুলশানের ৫৫ নং রোডে আরো একটি স্পা সেন্টারে অভিযান চালায় গুলশান পুলিশ এবং বেশ কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেফতার করে। তবে জানা গেছে স্পা সেন্টারটি নূর-ইসলাম নামের এক ব্যক্তির।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ বলেন,গুলশান থানায় এখন শৃঙ্খলা, জবাবদিহি ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এর কেন্দ্রবিন্দু বর্তমান ওসি হফিজুর রহমান। থানার ভেতরেও তিনি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছেন। দেরিতে কাজে আসা সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, নিয়মিত ব্রিফিং, সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের খোঁজ, দায়িত্বে অবহেলা হলে শাস্তির বার্তা এবং ভালো কাজ করলে তৎক্ষণাৎ প্রশংসা—এসব উদ্যোগ থানার সদস্যদের মনোবল বাড়িয়েছে। তবে ওসি শুধু নির্দেশ দেন না, মাঠে নেমে দেখান কীভাবে কাজ করতে হয়। গুলশানে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পার্টি, কিশোর গ্যাং, মাদকচক্র, ভুয়া গার্ড নেটওয়ার্ক, আর্থিক প্রতারণা এবং বিদেশি নাগরিকদের টার্গেট করে এমন চক্র সক্রিয় ছিল। এসব কারণে এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল। বর্তমানে গুলশানে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর রাতের টহল বাড়ানো, সিসিটিভি মনিটরিং সেল চালু, গার্ড ভেরিফিকেশন, পরিবারভিত্তিক কাউন্সেলিং এবং বিদেশিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশিকা এসব পদক্ষেপে গুলশান এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ রয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন অপরাধীর ভয় কমেছে, আর পুলিশের ওপর ভরসা বেড়েছে। জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব কমানোই ওসির অন্যতম লক্ষ্য ছিল এবং অনেকটাই সফলতা এনেছেন। থানায় গিয়ে হয়রানি নয়, বরং সেবা পাওয়ার পরিবেশ তৈরি হওয়ায় মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। নারী ও শিশুদের অভিযোগকে অগ্রাধিকার, প্রভাবশালী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, ব্যবসায়ীদের প্রতি সহযোগিতা এবং প্রতিদিনের প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা এসবই জনগণের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। ভবিষ্যতে গুলশানকে পুরোপুরি অপরাধমুক্ত করে ‘মডেল থানা’ হিসেবে গড়ে তুলতে স্মার্ট সিসিটিভি নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল বিট পুলিশিং প্ল্যাটফর্ম, কিশোর অপরাধ প্রতিরোধ সেল, নারীদের জন্য সেফ জোন এবং বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা ডেস্ক চালুর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্) জনাব মোহাম্মদ ওসমান গনি, পিপিএম বলেছেন, গুলশান থানায় ওসি হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এটি প্রমাণ করে, দক্ষ নেতৃত্ব, সুশৃঙ্খল পুলিশিং এবং জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আমরা মহানগরীর নিরাপত্তা ও আস্থা পুনঃস্থাপন করতে পারি। তিনি আরও বলেন, পুলিশ শুধু অপরাধ দমন নয়, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও আমাদের প্রধান দায়িত্ব। ওসি হাফিজুর রহমান মানবিক পুলিশিং, টার্গেটভিত্তিক অভিযান এবং বিট পুলিশিংয়ের কার্যকর ব্যবহার সাধারণ মানুষ ও পুলিশের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। এটি সকল পুলিশ সদস্যের জন্য অনুপ্রেরণা এবং তিনি ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানায়ও বেশ দ্বায়িত্ব ও সততার সাথে কাজ করেছেন। এয়াড়া আমরা চেষ্টা করছি প্রতিটি থানায় এই ধরনের কার্যকর মডেল চালু করতে। প্রযুক্তি ব্যবহার, সিসিটিভি মনিটরিং, ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং দ্রুত সাড়া এসবই আমাদের লজিস্টিকস্ বিভাগের লক্ষ্য। জনগণের আস্থা ফিরে এলে অপরাধীদের প্রভাব কমে আসে এবং মহানগরী আরও নিরাপদ হয়। তবে গুলশানের এই সফল মডেল পুরো ঢাকায় প্রতিস্থাপন আমাদের স্বপ্ন এবং এ ধরনের উদাহরণ দেশের পুলিশিং ব্যবস্থার জন্য অনন্য শিক্ষা।
অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, ওসি হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে গুলশান থানায় আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং অপরাধ দমন কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসনীয়। তার জিরো টলারেন্স নীতি শুধু স্লোগান নয়, এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে নিরাপত্তা ও আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। তিনি আরও বলেন, ওসি হাফিজুর রহমানের উদ্যোগে মাদক, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং এবং যৌন হয়রানির মতো অপরাধের বিরুদ্ধে তৎপর অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে মানবিক পুলিশিংও ওসি হাফিজুর রহমানের কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি শুধু অপরাধ দমন করেন না, বরং সাধারণ মানুষের সাথে মিশে এক দৃষ্টিস্থাপন করেছেন। এ কারণে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের আস্থা দৃঢ় হয়েছে। এ ধরনের পেশাদার ও মানবিক নেতৃত্ব পুরো মহানগরীর পুলিশিং ব্যবস্থার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি থানায় এই মডেল সম্প্রসারণ করা।
